Wednesday, 16 November 2016

বাংলা দ্বিতীয় পত্র 

                                স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন

ভাব-সম্প্রসারণ : অগণিত লোকের প্রাণান্তকর সংগ্রাম এবং অঢেল রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। এত ত্যাগ ও কষ্ট সাধনের পর যে স্বাধীনতা অর্জিত হয় তা রক্ষা করার জন্য অধিকতর সচেতনতা, পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের প্রয়োজন। 
অন্যের অধিকার বা শাসনের বাইরে থাকার নাম স্বাধীনতা। স্বাধীনতা জাতীয় জীবনের অমূল্য সম্পদ। স্বাধীনতা অর্জন কঠোর শ্রম ও সীমাহীন ত্যাগের ফল বলে বিবেচনা করতে হয়। অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা এবং বহু প্রাণের আত্মবিসর্জনের মধ্য দিয়ে এ স্বাধীনতা অর্জিত হয়। কারণ শক্তিমান শাসকরা কখনও পদানত জাতিকে স্বাধীনতা দান করে না। কষ্টার্জিত এ স্বাধীনতা শুধু অর্জনের মধ্যে আবদ্ধ রাখলে তার যথার্থ রূপ প্রত্যক্ষ করা যায় না। স্বাধীনতাকে মর্যাদাশীল করে রাখতে হয়। আর মর্যাদাশীল করে রাখার কাজটিই সবচেযে দুরূহ ও গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘ সংগ্রাম আর অপরিসীম আত্মত্যাগে যে স্বাধীনতার আগমন ঘটে তার সামনের দিনগুলো আরও ভয়াবহ ও সংকটময় বলে বিবেচিত হয়। তাই স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য আরও বেশি শক্তি প্রয়োজন। কারণ স্বাধীন দেশের ভেতর ও বাইরে শত্রুর অবধি থাকে না। বাইরে ও ভেতরের বিরোধিতা থেকে দেশের স্বাধীনতা রক্ষার সাধনা যথার্থই কঠোর সাধনা। স্বাধীনতার পূর্বেকার শত্রুরা অদৃশ্যভাবে দেশের ক্ষতি করে। তাদের পরাজিত করা অত্যন্ত কষ্টের ব্যাপার। এভাবে চলতে থাকলে রাষ্ট্রীয় জীবনে হতাশা দেখা দেয়, কর্মোদ্দীপনা কমে যায় এবং জাতীয় উন্নতির পথ হয় কণ্টকাকীর্ণ। তখন স্বাধীনতার গুরুত্ব, তাৎপর্য ও মর্ম রক্ষা করার প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দেয়। তাই স্বাধীনতা রক্ষার জন্য দেশের আপামর জনসাধারণকে অশেষ চেষ্টা ও কর্তব্যপরায়ণতার সঙ্গে মাঠে-ময়দানে, কল-কারখানায় অবিরাম কাজ করতে হয়। দেশকে শিল্প ও বাণিজ্যে উন্নত করে দেশের আর্থিক সচ্ছলতা আনতে হয়। কৃষির উন্নতি বিধান করে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে হয়। দেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড যদি দৃঢ় থাকে এবং দেশ যদি খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয় তাহলেই জনসাধারণের মধ্যে প্রেরণা ও সচেতনতা পরিলক্ষিত হয়। তখন দেশের স্বাধীনতা বিপন্ন হওয়ার ভয় থাকে না। কিন্তু জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কাজগুলো করা খুব সহজ নয়। ১৯৭১ সালে আমাদের দেশের মুক্তিযোদ্ধারা ৩০ লাখ প্রাণের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলেন, তাকে কি আমরা যথেষ্ট মর্যাদার সঙ্গে রক্ষা করতে পারছি? স্বাধীনতা লাভের পরও বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেভাবে নীতিহীনতা, অত্যধিক ব্যয়ের প্রবণতা, অসামাজিক কার্যকলাপ, শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস বেড়ে চলছে_ এ অবস্থা যদি দীর্ঘদিন চলতে থাকে তবে স্বাধীনতা রক্ষা করা কি সত্যিই সম্ভব হবে? অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দিক থেকে যথেষ্ট সচেতন ও শক্তিশালী না হলে স্বাধীনতা রক্ষা করা সত্যিই দুরূহ হয়ে পড়বে। স্বাধীনতাহীনতায় এ পৃথিবীর কেউই বাঁচতে চায় না। ফলে স্বাধীনতা অর্জনের আকাঙ্ক্ষা প্রতিটি মানুষের মধ্যেই থাকে। কিন্তু একে রক্ষা করার বিষয়টিও ভুলে গেলে চলবে না, সবার সমবেত চেষ্টা ছাড়া স্বাধীনতাকে সত্যিকার অর্থে অর্থবহ ও রক্ষা করা সুকঠিন হবে। 

No comments:

Post a Comment