Sunday, 21 August 2016

                                         প্রাণ থাকলে প্রাণী হয়, কিন্তু মন না থাকলে মানুষ হয় না

ভাব-সম্প্রসারণ : অন্যান্য প্রাণিকুলের মতো শুধু প্রাণ বা জীবনের অস্তিত্ব থাকলেই মানুষ পরিপূর্ণ মানুষে পরিণত হয় না, যথার্থ মানুষ হতে হলে দেহে উদার অন্তঃকরণ তথা মনের উপস্থিতি অত্যাবশ্যকীয়।
বিশ্ব বিধাতার অপূর্ব সৃষ্টি এ পৃথিবী। অতি যত্নে, মমতায় তিনি সৃষ্টি করেছেন এ বিশ্ব। এ সৃষ্টি বৈচিত্র্যে তার নৈপুণ্যের অন্ত নেই। বিশ্ব জগতে যাদের প্রাণ আছে তারাই প্রাণী নামে বিবেচিত। জন্মের দিক দিয়ে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। জন্মের প্রাথমিক স্তরে অন্যান্য প্রাণীর মতোই তার বৃদ্ধি ও বিকাশ ঘটে প্রাকৃতিক নিয়মে। এ বৃদ্ধি ও বিকাশ লাভের জন্য মানুষকে কোনো চেষ্টা, যত্ন, সাধনা বা ত্যাগ স্বীকার করতে হয় না। কিন্তু মানুষের মধ্যকার মন নামক বিশেষ সত্তাটির জন্যই তাকে অতিরিক্ত জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করতে হয়। মানুষ ছাড়া অন্য জীবের মধ্যে যা নেই
প্রাণ থাকলে প্রাণী হয়, কিন্তু মন না থাকলে মানুষ হয় না
এ অনুভূতি উদ্ভূত মানবিক চেতনা। এ মানবিক চেতনা অন্য প্রাণীর না থাকায় মানুষের যে মহৎ গুণাবলি অর্জনের সুযোগ ঘটে তা অন্য প্রাণীর পক্ষে সম্ভব হয় না। মানুষ তার মন দিয়ে সাধনা করে জীবনের বিচিত্র বিকাশ ঘটায়। মনের কার্যকলাপ থেকে সভ্যতা-সংস্কৃতি, জ্ঞান-বিজ্ঞানের ঘটেছে বিকাশ। মানুষের যা কিছু গুণাবলি তার ভিত্তি তার মন। মনের দ্বারাই সে ভালোমন্দ, দোষ-গুণ, ন্যায়-অন্যায় বিবেচনা করতে পারে। এ মন থেকেই সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষের বৈশিষ্ট্যের বিকাশ ঘটেছে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, যার শারীরিক গঠন মানুষের মতো তিনিই মানুষ। এ জন্য তাকে অনেক সাধনা করতে হয়। সুন্দর মনের অভাবে মানুষের প্রাণ থাকলেও সে মানুষে পরিণত হয় না। তার অসুন্দর, অমানবীয় ও পশুর মতো আচরণ তাকে প্রকৃত মানুষ হওয়ার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। তাই মানুষের প্রাণে মনুষ্যত্ব সৃষ্টি করার জন্য অনেক পড়াশোনা এবং সাধনার প্রয়োজন হয়। আমাদের সমাজে অনেক মানুষও পশুর মতো কাজ করে বেড়াচ্ছে। কারণ তাদের প্রাণে যথার্থ মনুষ্যত্বের উদ্ভব ঘটেনি। এ জন্য আমরা বলতে পারি, মনের মানুষই প্রকৃত মানুষ। মানুষকে তার শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখার জন্য মানবিক চিন্তা-ভাবনার উৎকর্ষ সাধন করতে হবে। মানুষ যদি তার শ্রেষ্ঠত্বের চর্চা যথাযথভাবে না করে তবে পশু ও মানুষের মধ্যে পার্থক্য করা কঠিন হয়ে উঠবে।

No comments:

Post a Comment